সারাদেশ

স্মার্টফোনে আসক্তি বাড়ছে শিশুদের, হুমকিতে ভবিষ্যৎ

স্মার্টফোনে আসক্তি বাড়ছে শিশুদের, হুমকিতে ভবিষ্যৎ

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শিশুদের স্মার্টফোনে আসক্তি বেড়েই চলেছে। ফলে শিশুদের মানসিক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। অভিভাবকদের অসচেতনতা, খেলাধুলায় সময় না দেওয়া, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, শিশুদের একাকিত্বতা ও ফোনের অধিক ব্যাবহার এর জন্য দায়ী বলছেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের এমন অভ্যাস নিয়ে অভিভাবকরাও উদ্বীগ্ন।

 

সচেতন মানুষ ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে একটা সময় এটা অভ্যাসে বা আসক্তিতে পরিণত হয়। অনেক দিন ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শিশুদের কারও কারও শারীরিক ও মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। শারীরিক সমস্যাগুলো হলো- ঘুমের অসুবিধা, পরিপূর্ণ ঘুম না হওয়া, পিঠ, কোমরে কিংবা মাথা ব্যথা, চোখ ব্যথা বা চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি রয়েছে।

 

কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ঝাকালিয়া এলাকার প্রবাসী জসিম উদ্দিনের এক মেয়ে ও দুই ছেলে মাহিদ (৮) জাহিদ (১২) নাদিরা ( ১৫)। দিনের অধিকাংশ সময় ফোন নিয়ে সময় পার করে৷ খেলাধুলার প্রতি নেই আগ্রহ। মোবাইল নিয়ে গেলেই কান্নাকাটি শুরু করে। ফোনে অধিক সময় দেওয়াতে তাদের সহপাঠীদের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। লেখাপড়ার প্রতিও অমনোযোগী। এ নিয়ে চিন্তিত পরিবার।

 

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টে নিয়মিত কাজ করা বিশেষজ্ঞ সূত্রের সাথে কথা বলে জানা জানায়, দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে- উদ্বিগ্নতা, অসততা, নিজেকে দোষী বোধ করা, অতিচঞ্চলতা ও হিংসাত্মক আচরণ করা। এসব শিশুরা সারাক্ষণ একা থাকতে ভালোবাসে। ফলে বাইরে যাওয়া, অন্যদের সঙ্গে মেশা, সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা ও সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলার প্রবণতাও কমে যায়।

 

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ নির্ভর করে পরিবেশ ও অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে। শিশুরা দেখে এবং অন্যদের সঙ্গে খেলতে খেলতে সব কিছু শেখে। এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে শিশুদের কথা বলা, হাঁটা-চলা ও স্বাভাবিক বুদ্ধির বিকাশ হয়। এ সময়ে শিশুর দীর্ঘসময় স্মার্টফোনে গেম খেলা, ভিডিও দেখা, গান শোনা, আবার স্বাভাবিক খেলাধুলা না করায় শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

পাশাপাশি শিশুরা স্মার্টফোনে ভিডিও দেখতে দেখতে খাবার খেলে সেই খাবার শিশুর বিকাশে পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখে না। যেকোন খাবারের হজম প্রক্রিয়া শুরু হয় মুখের লালা থেকে। খাবার হজম হতে যেমন লালা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি মুখে লালা আসার জন্য খাবারটা দেখতে হয়, খাবারে মনোযোগ দিতে হয়। যেমন টক জাতীয় খাবার দেখলেই মুখে লালা আসে।

 

বাচ্চারা যখন ভিডিও দেখতে দেখতে খায়, সে যদি খাবারটা না দেখে তাহলে মুখে লালা আসে না। লালা না এলে হজম প্রক্রিয়ার কিছু অংশ অসমাপ্ত রয়ে যায়। ফলে যেসব বাচ্চারা মোবাইলে ভিডিও দেখতে দেখতে খায় তাদের হজমে সমস্যা হয়, এতে বাচ্চাদের অনেক সময় ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু এ বিষয়ে বলেন, শিশুদের মধ্যে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অনেকাংশেই বেশি। গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলের শিশুরা বেশি মোবাইল ব্যবহার করে।

 

দেখা যাচ্ছে, এক-দুই বছরের বাচ্চারা বেশি মোবাইল ফোনে আসক্ত হচ্ছে। এক-দেড় বছরে বাচ্চারা কিছু কথা বলা শুরু করে। এ সময়টায় মোবাইলে আসক্ত হলে কথাগুলো হারিয়ে যায়, স্পিচ ডিলে সমস্যা, আবার অনেক বাচ্চা কথাই বলে না।

 

প্রথম পাঁচ বছর একটি বাচ্চার স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে। হাঁটা, বসা, চলা, কথা বলা ও বুদ্ধি হওয়া এগুলোর সবই তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যায়। এ সময়টাকে যদি কাজে লাগানো না যায় তাহলে সেটা আর কখনোই ফিরে আসবে না। এ বয়সেই বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ ও সব ধরনের বৃদ্ধি ঘটে। পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে কথা বলতে, মস্তিষ্কের বিকাশে ও আচরণগত বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

 

তিনি আরও বলেন, প্রথম পাঁচ বছর বাচ্চার মস্তিষ্ক থাকে একেবারে নরম কাদামাটির মতো। এ সময়ে তাকে যেভাবে যা বোঝানো ও শেখানো হবে, তাই শিখবে। পাঁচ বছরের পর বাচ্চার ব্রেন শক্ত হয়ে যায় তখন আর নতুন করে বিকাশ ঘটে না। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়স হচ্ছে বাচ্চার ব্রেনের বিকাশে সবচেয়ে ভালো সময়। সেই সময়টাতেই বাচ্চারা মোবাইল ধরার ফলে তাদের বিকাশ অনেকাংশে বাধাগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কের বিকাশে ও আচরণগত বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

 

আরও খবর

Sponsered content