সারাদেশ

‘ঘরে থাকতে চাই না, কেউ একটি হুইল চেয়ার দিলে আমি স্কুলে যাইতাম’

‘ঘরে থাকতে চাই না, কেউ একটি হুইল চেয়ার দিলে আমি স্কুলে যাইতাম’

প্রায় চার বছর ধরে পঙ্গুত্ব জীবনবরণ করছে কুড়িগ্রামের মুগ্ধ চন্দ্র রায় (১৩)। একদিকে ছেলের চিকিৎসার অভাব, অন্যদিকে একটি হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ না থাকায় প্রতিবন্ধী ছেলে বাড়িতে বাগরুদ্ধ হয়ে পড়ে থাকায় চরম বিপাকে দিন কাটাচ্ছেন অসহায় বাবা-মা।

 

প্রতিবন্ধী মুগ্ধ চন্দ্র রায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়ভিটা শল্লীধরা গ্রামের দিনমজুর শীতেন্দ্র নাথ রায়ের ছেলে। শীতেন্দ্র নাথ রায়ের দুই ছেলে। মুগ্ধ সবার বড়। মুগ্ধ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ছোট ছেলে পলাশ চন্দ্র এবছর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দিনমজুর শীতেন্দ্র নাথ রায়ের ১০ শতক জমির উপর বাড়িভিটা। ১ বিঘা আবাদি জমি থাকায় চাষাবাদ করার পাশাপাশি দিনমজুরির কাজ করে দুই ছেলেসহ চার সদস্যের সংসার অনেকটা স্বচ্ছলভাবে জীবন-যাপন করতেন।

 

কিন্তু গত চার বছর আগে বড় ছেলে মুগ্ধ চন্দ্র রায় বাড়ির পাশে একটি দোলায় হাঁস আনতে যায়। ডোবায় পড়ে মুগ্ধর দুই পাঁ, মাথা ও কোমরে মারাক্তকভাবে আঘাত পান। সেই হাঁস ধরতে গিয়ে মুগ্ধর জীবনটা একেবারে তছনছ হয়ে যায়।

 

পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েও ছেলে মুগ্ধকে সুস্থ করতে পারেনি পরিবার। ছেলের চিকিৎসার জন্য ১ বিঘা আবাদি জমি ৩ লাখ টাকা বন্ধকসহ গত চার বছরে বিভিন্ন নিকট আত্মীয়-স্বজন ও গরু-ছাগল বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ করেও পুরোপুরিভাবে ছেলেকে সুস্থ করতে পারেনি। ফলে চোখের সামনে ছেলে পঙ্গুত্ব জীবনবরণ করতে হচ্ছে।

 

এদিকে অভাবের তাড়নায় ছেলের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অসহায় পরিবারটি। চোখের সামনে সন্তানের এই করুণ পরিণতি দেখে অসহায় বাবা-মা প্রায় সময়ই বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পাশাপাশি সন্তানের মুখে ভাল কিছু খাবার তুলে দিতে না পাড়ার কষ্টটাও নাড়া দেয় সবসময়। ফলে সন্তানের চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে চরম দুশ্চিন্তায় পার করছেন পরিবারটি।

 

বর্তমানে শীতেন্দ্র নাথ রায় ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা ও দিনমজুরির কাজ করে কোন রকমে অসুস্থ ছেলেসহ অতিকষ্টে খেয়ে না খেয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। যেখানে সংসার চালানো দায়, সেখানে ছেলের সু-চিকিৎসার খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে অসহায় পিতার পক্ষে প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে একটি হুইল চেয়ারের আকুতি জানিয়েছেন।

 

মুগ্ধ চন্দ্র রায় সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, সারাক্ষণ শুধু বাড়িতে চেয়ারে বসে থাকা ও বিছানায় শুয়ে থাকায় আমার খুব কষ্ট হয়। মাঝেমধ্যে বাঁশের তাঁর ধরে একটু হাঁটাচলা করি। কিন্তু খুব কষ্ট হয়। তাই কেউ যদি আমাকে একটি হুইল চেয়ার দিতো তাহলে ভালো হতো। চার বছর ধরে স্কুল যেতে পারিনি। কেউ একটি হুইল চেয়ার দিলে আমি আবারও স্কুলে যেতে পারতাম।

 

প্রতিবন্ধী মুগ্ধ চন্দ্র রায়ের বাবা শীতেন্দ্র নাথ রায় সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, বাহে সব কিছুই স্বচোখে দেখলেন। ছেলে এখন পঙ্গুত্ব জীবন কাটাছে। বলার ভাষা নেই আমার। তিনি বলেন, গত ৪ বছরে সন্তানের চিকিৎসার জন্য প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ করেছি। কিন্তু সুস্থ করতে পারেনি! এসময় তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে অসুস্থ ছেলের জন্য সরকারসহ সমাজের বিত্তবান এবং দানশীল ব্যক্তির কাছে একটি হুইল চেয়ারের আকুতি জানিয়েছেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সিব্বির আহমেদ সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে অসুস্থ মুগ্ধ চন্দ্রকে একটি হুইল চেয়ার দেওয়ার আশ্বাস দেন।

 

আরও খবর

Sponsered content