সারাদেশ

৮০ টাকার স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়

৮০ টাকার স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়

বগুড়ার শেরপুরে স্যালাইন সংকটের কারণে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু, সার্জারি, ডায়ালাইসিসসহ বিভিন্ন রোগীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ফ্লুইড স্যালাইন সংকটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো তীব্র সংকটে ভুগছে। শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেও মিলছে না স্যালাইন। তবে কিছু ফার্মেসীতে পাওয়া গেলেও ৮০/৯০ টাকা মুল্যের স্যালাইন কিনতে হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায় ফলে রুগী ও তাদের স্বজনরা পড়ছেন চরম বিপাকে।

 

প্রায় ২ মাস যাবৎ কোম্পানী গুলো প্রয়োজনের তুলনায় কম স্যালাইন সরবরাহ করলেও কয়েকদিন যাবৎ একেবারেই সরবরাহ বন্ধ রেখেছে কোম্পনী গুলো। এতে করে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে জরুরী স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত হচ্ছে। রুগীর স্বজনরা স্যালাইনের জন্য এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ছুটাছুটি করছে। সংকট মেটাতে বাজার মনিটরিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।

 

অনুসন্ধানে জানাযায়, শেরপুরে সাধারনতঃ অপসো স্যালাইন লিমিটেড, লিবরা ইনফিউশন লিমিটেড,অরিওন ইনফিউশন লিমিেিটড, দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড ও পপুলার কোম্পনীর ডিএ, ডিএনএস ও নরমাল স্যালাইন সরবরাহ করে থাকে।

 

শেরপুর উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান নিলু জানান, শেরপুর উপজেলায় ১৬ টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। এ সব ক্লিনিকে জরুরী সেবা যেমন, নরমাল ডেলিভারী, সিজারিয়ান অপারেশন, গলবøাডারের পাথর অপারেশন, এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনসহ জরুরী বিভিন্ন অপারেশন করা হয়। এসকল অপারেশনের জন্য ফ্লুইড সালাইন অত্যাবশ্যক।

 

কিন্তু প্রায় তিন মাস যাবৎ চাহিদার তুলনায় কম ফ্লুইড সালাইন সরবরাহ করছেন কোম্পানী গুলো। এতে করে জরুরী স্বাস্থ্য সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শেরপুর হাসপাতাল রোডের অষুধ ব্যবসায়ী আবু সামা জানান, প্রতিদিন আমাদের যে ফ্লুইডের চাহিদা থাকে তার তুলনায় কোম্পনীগুলো সরবরাহ করতে পারছেনা। তাই রোগীর স্বজনরা ফ্লইড না পেয়ে দোকানে দোকানে ছুটাছুটি করছে।

 

শেরপুর লাইফ লাইন ক্লিনিকের পরিচালক আব্দুল হান্নান জানান, প্রতিমাসে আমাদের ক্লিনিকে প্রায় ৪০০/৫০০ লিটার ডিএ, ডিএনএস,হার্টসল ও সিএস স্যালাইন প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রায় ২ মাস যাবৎ কোম্পানী গুলো ৫০ থেকে ৬০ লিটার স্যালাইন সরবরাহ করছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ কারণে আমরা জরুরী অপারেশন ও মূমুর্ষূ রুগীর চিকিৎসা করতে পারছিনা।

 

গতকাল শনিবার শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোনা এলাকার ফিরোজ আহম্মেদ তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী জান্নাতী(২১) কে শেরপুরের একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভর্তি করেছেন। তার অপারেশনের জন্য ১লিটার নরমাল(এনএস) ১লিটার ডিএ, ১লিটার ডিএনস ও ১ লিটার হার্টসল ফ্লুইড স্যালাইন প্রয়োজন।

 

তিনি জানান, এসব স্যালাইন সংগ্রহের জন্যে আমি হাসপাতাল রোড ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অনেক ফার্মেসিতে ঘুরেও স্যালইন পাইনি। স্যালাইন না পেলে সময় মত আমার স্ত্রীর অপারেশন সম্ভব হচ্ছেনা। শেরপুর উপজেলার বিশালপুর এলাকার তাজুল ইসলাম নামের একজন স্বজন জানান, তার এক আত্মীয়কে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ডায়রিয়া জনিত সমস্যার কারণে ভর্তি করা হয়েছে।

 

কিন্তু হাসপাতাল থেকে স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছেনা। তিনি জানান বাইরের দোকানে দোকনে ঘুরেও স্যালাইন পাচ্ছিনা। সুমন নামের এক রুগীর স্বজন জানান, তিনি তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য বিভিন্ন দোকানে ঘুরে প্রায় দ্বিগুণ দামে কয়েকটি স্যালাইন সংগ্রহ করেছি।

 

অনুসন্ধানে জানাযায়, এই ধরণের ফ্লুইড স্যালাইন আগে ৮০/৯০ টাকায় বিক্রি হতো এখন সংকটের কারণে ২০০/২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবং কলেরা স্যালাইন ৪০০/ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

শেরপুর উপজেলার দায়িত্বে নিয়োজিত অপসো স্যালাইন লিঃ এর ম্যানেজার মিন্টু দাস জানান, হঠাৎ করেই ফ্লুইড স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা মত স্যালাইন সরবরাহ করা যাচ্ছেনা। একারণে বাজারে স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে।

 

শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজিদ হাসান স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে স্যালাইন সরবরাহ কম থাকায় আমরা রুগীদের চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন দিতে পারছিনা। পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহের জন্য আমরা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।

আরও খবর

Sponsered content