পরবাস

মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু

মালয়েশিয়া প্রবাসীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চালু হলো ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম। উদ্বোধন করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা, সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল-মাসুদ চৌধুরী। এ সময় নবাজতক শিশুর এনরোলমেন্টের মাধ্যমে শুরু হয় ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম।

 

এরপর, পাসপোর্ট ও ভিসা উইংয়ের কাউন্সেলর মিয়া মোহাম্মদ কিয়াম উদ্দিনের উপস্থাপনায় শুরু হয় এক আলোচনা সভা। সভার সভাপতিত্ব করেন, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আসান।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে, স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা, সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল-মাসুদ চৌধুরী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে ই-পাসপোর্ট , ই-গেইট, ও মান সম্মত ইমিগ্রেশন পরিষেবার কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে, ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ নুরুস ছালাম পিএসসি বলেন, ই-পাসপোর্ট পৃথিবীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। আপনারা ই-গেইট দিয়ে সহজেই ইমিগ্রেশন পার হতে পারবেন কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই।

হাইকমিশনার মো. শামিম আহসান বলেন, মালেয়শিয়ায় ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ায় ডিজিটাল বাংলাদেশ আরও বেশি সার্থক হয়েছে। প্রবাসীদের সেবার ব্যাপারে সব সময় আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন, ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর। আরও বক্তব্য দেন, এক্সপ্যাট সার্ভিসের পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমদ ও এক্সপ্যাট সার্ভিসের মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং পরিচালক অভিনেতা এসএম আরমান পারভেজ।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে কার্যক্রম শুরু করার জোর প্রচারণা চালালেও একদিন আগে অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় আবেদন গ্রহণ।

এর আগের দিন ১৭ এপ্রিল হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা উইংএর কাউন্সেলর মিয়া মোহাম্মদ কিয়াম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ই-পাসপোর্ট আবেদন দাখিলের জন্য আবেদনকারীকে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকৃত আউটসোর্সিং কোম্পানি ‘এক্সপ্যাট সার্ভিসের কুয়ালালামপুর এসডিএনবিএইচডি’ (ইএসকেএল)-এর মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া বাধ্যতামূলক।

ঠিকানা: সাউথগেট কমার্শিয়াল সেন্টার, লেভেল-২, ব্লক ই, নং-২, জালান দুয়া অফ জালান চ্যান সো লিন-৫৫২০০, কুয়ালালামপুর।

ই-পাসপোটের সরকারি ফি

ভিসা ক্যাটাগরি (সাধারণ শ্রমিক) ৪৮ পাতা ৫ বছর মেয়াদির জন্য ১৬৪ রিঙ্গিত (ইএসকেএল সার্ভিস চার্জ বাবদ ৩২ রিঙ্গিত)। ভিসা ক্যাটাগরি (অন্যান্য) ৪৮ পাতা ৫ বছর মেয়াদির জন্য ৫৪৫ রিঙ্গিত (ইএসকেএল সার্ভিস চার্জ বাবদ ৬০ রিঙ্গিত)।

চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রাজধানী কুয়ালালামপুরের সাউথগেট কমার্শিয়াল সেন্টারে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানামুখী সেবা নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি মালয়েশিয়া প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়নসহ অন্যান্য সেবাদানে হয়রানি ও দালালমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়ে আসছে। এক্সপ্যাট সার্ভিস কল সেন্টার দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়, ই-পাসপোর্ট সেবার পাশাপাশি, ধাপে ধাপে যুক্ত হয়েছে বিদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা সার্ভিস এবং পাসপোর্ট নেই এমন প্রবাসীদের জন্য ট্রাভেল পারমিট প্রদান, যা আগে সরাসরি হাইকমিশন থেকে সংগ্রহ করতে হতো প্রবাসীদের।

‘এক্সপ্যাট সার্ভিস প্রবাসীদের জন্য জালান চান সো লিনে (সিটি সেন্টারের পাশে) প্রায় ১৪ হাজার বর্গফুট প্রশস্ত ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিয়ে আসছে, যেখানে একইসঙ্গে সব সেবা যুক্ত থাকবে। ৪৫টি কাউন্টারের মাধ্যমে চলবে এ সেবা।’

কোনো প্রবাসী পাসপোর্ট করতে চাইলে ব্যাংক ড্রাফট থেকে শুরু করে ফরম পূরণ পর্যন্ত সব কাজে সহযোগিতা করবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।

সেবা গ্রহণকারী প্রবাসীদের প্রয়োজন হলে +৬০৩৯২১২০২৬৭ নম্বরে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং এক্সপ্যাট সার্ভিস দ্রুততম প্রবাসীদের আন্তরিক সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে বলে জানানো হয়েছে।

এছাড়া, আউটসোর্সিং কোম্পানি ইসিএল রাজধানী কুয়ালালামপুরের বাইরে একাধিক রাজ্যে, যেমন জহরবারু ও পেনাংয়ে হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে মোবাইল টিমের মাধ্যমে সেবা দেবে।

ইসিএল পরিচালিত ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস সেন্টারটির সার্বিক কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় সরাসরি হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এবং সিসিটিভির মাধ্যমে তা হাইকমিশন থেকে সরাসরি মনিটরিং করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উন্নত দেশের আদলে এ ধরনের ব্যবস্থা প্রবাসে সেবা সহজতর ও দ্রুততর করবে এবং সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন আনবে বলে প্রত্যাশা মালয়েশিয়া প্রবাসীদের।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, হাইকমিশনের ডিফেন্স উইং কমোডর মো. হাসান তারিক মন্ডল, হাউন্সিলর শ্রম মো. শরিফুল ইসলাম, কাউন্সিলর রাজনৈতিক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য, দূতালয় প্রধান ফারকানা আহমদ চৌধুরী, বিএমসিসি আইয়ের পরিচালক মাহবুব আলম শাহ, কাউন্সিলর কন্স্যুলার মুর্শেদ আলম, প্রথম সচিব বাণিজ্যিক প্রণব কুমার, প্রথম সচিব শ্রম সুমন চন্দ্র দাস, কমিউনিটি নেতা, দাতুশ্রী কামরুজ্জামান কামাল, মকবুল হোসেন মুকুল, সিআইপি অহিদুর রহমান ওহিদ, রাশেদ বাদল, দাতু আক্তার হোসেন, শাহীন সরদার, মনিরুজ্জামান মনির, দাতু আব্দুল রোফ লিটন, দাতুশ্রী জালাল উদ্দিন সেলিম, নাজমুল ইসলাম বাবুল। এছাড়া প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।