শিক্ষাঙ্গন

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধে অনড় শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে অনড় অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে তারা পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিও পালন করছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ ইস্যুতে ফের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন তারা।

 

তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে রাজনীতি চান না। একই সঙ্গে ছাত্রদলের সংহতিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগমনা ছয় শিক্ষার্থী হত্যার হুমকি পাচ্ছেন দাবি করে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

 

গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে বুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। তারা বলেন, আমরা নিজেদের ক্যাম্পাসে সব দল-মতের লেজুড়বৃত্তিক সাংগঠনিক রাজনীতি এবং মৌলবাদী দলগুলোর বিপক্ষে আছি এবং থাকব।

 

এই অবস্থান সব দল-মতের ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। যে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাস শত শত শিক্ষার্থীর ভোগান্তি; সনি, দ্বীপ ও আবরারের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি– কোনো রাজনৈতিক অপতৎপরতায় আমরা সেই অর্জন হারাতে রাজি নই।

 

ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে তারা বলেন, ছাত্রদল সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি চর্চায় বিশ্বাসী এবং অপরাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানোর কথা বলেছে। আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে চলমান আন্দোলনের এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে ছাত্রদলের এমন বক্তব্যকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করি এবং তাদের এই রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট সংহতিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।

 

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা গত দুই দিনে নিজ নিজ ইনস্টিটিউশনাল মেইল ব্যবহার করে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করেছেন। এতে ৫ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এতে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে স্বাক্ষর দিয়েছেন ৫ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

 

উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি

ক্রমাগত হত্যার হুমকি পাচ্ছেন দাবি করে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বুয়েটের ছাত্রলীগমনা ছয় শিক্ষার্থী। স্মারকলিপি প্রদান শেষে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আশিকুল আলম, সাগর বিশ্বাস ও তানভীর রহমান স্বপ্নিল। তারা বলেন, হাইকোর্ট যেহেতু রায় দিয়েছেন এবং উপাচার্যও যেহেতু বলেছেন যে হাইকোর্টের রায় শিরোধার্য; তাই যদি উপাচার্যের অনুমতি থাকে আমরা বুয়েটে প্রগতিশীলতার রাজনীতি চাই।

তারা বলেন, আমাদের ক্রমাগত জীবননাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উপাচার্যের কাছে সবকিছুর প্রমাণ নিয়ে লিখিত আবেদন করেছি। যেভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাতে আমরা জীবন নিয়ে শঙ্কিত। আমাদের পরিবারের কাছে ফোন করে বলা হচ্ছে, ‘আপনার সন্তানকে দেখে রাখুন, নয়তো পরে পাবেন না।’ এই কথাগুলোর মানে কী? এই সবকিছুই করা হচ্ছে কারণ আমরা হিজবুত তাহ্‌রীর এবং শিবিরের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি।

 

তৃতীয় দিনের মতো পরীক্ষা বর্জন

ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকালও পরীক্ষা বর্জন করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে তৃতীয় দিনের মতো পরীক্ষা বর্জন করেছেন তারা। এর আগে গত ৩০ ও ৩১ মার্চ দুটি পরীক্ষায় অংশ নেননি তারা।

 

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের তেমন আনাগোনা নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো যথারীতি খোলা আছে। সেখানে দাপ্তরিক কাজ চলছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার ১৮ ব্যাচের একটি টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। কিন্তু আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা এ পরীক্ষায় অংশ নেননি।

 

এদিকে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আন্দোলনের মধ্যেই ১৩ দিনের ছুটিতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রোজা, ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটি মিলিয়ে আজ ৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি থাকছে বুয়েট ক্যাম্পাস।

 

আরও খবর

Sponsered content